স্টাফ রিপোর্টার
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে যৌতুকের জন্য শাবনূর আক্তার (২০) নামের এক গৃহবধূকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গৃহবধূকে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ গৃহবধূ শাবনূর আক্তারের পরিবারের। এদিকে শাবনূর আক্তারের ভাই সম্রাট শেখ বাদী হয়ে স্বামী রবিন ও তার মামা আসলাম, মাতা নাছিমা বেগম, পিতা পিয়ার আলী, খালা সুমা আক্তার ও বোন রাব্বি আক্তারকে অভিযুক্ত করে সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-২০।মামলার এজাহারে, উপজেলা কেয়াইন ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের শেখ সোনা মিয়ার ছোট মেয়ে শাবনুর আক্তারের সাথে দুই বছর পূর্বে শেখরনগর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে সৌদি প্রবাসী রবিনের সাথে ইসলামী সরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী রবিন সৌদি প্রবাসে চলে যায়। এর কিছুদিন পর থেকে তার স্বামী রবিনের মামা আসলাম, মাতা নাছিমা বেগম, পিতা পিয়ার আলী, খালা সুমা আক্তার ও বোন রাব্বি আক্তার শাবনুরকে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে আসছিলো। প্রায় ৩ মাস পূর্বে গৃহবধূ শাবনূর আক্তারের স্বামী রবিন দেশে আসে।
গত সোমবার রাত অনুমান ৮ টার দিকে শাবনূর আক্তারের খালা সাফি বেগমের মোবাইল ফোন করে রবিনের মামা আসলাম শাবনুর আক্তারকে তার স্বামীর বাড়ী থেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলে। ওইদিন রাত অনুমান পৌনে ৯টার দিকে রবিনের মামা আসলাম শাবনূর আক্তারের খালা সাফি বেগমকে পুনরায় ফোন করে জানায় যে, তার ভাগনি শাবনুর আক্তার বসত ঘরের ফ্যানের সাথে গলায় ফার্স লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে শাবনূর আক্তারের পরিবারের লোকজন
তার স্বামীর বাড়ীতে গেলে বসত ঘরের ভিতরে একটি কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে শাবনুর আক্তারকে ফার্স লাগানো অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখতে পান।তারা বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ শাবণূর আক্তারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। সোমবার রাত অনুমান ৮ থেকে রাত অনুমান পৌনে ৯ টার মধ্যে স্বামী রবিন ও তার মামা আসলাম, মাতা নাছিমা বেগম, পিতা পিয়ার আলী, খালা সুমা আক্তার ও বোন রাব্বি আক্তার পরস্পর যোগসাজশে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য স্বামী রবিনের বসত ঘরের ভিতরে কক্ষে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে গৃহবধূ শাবনূর আক্তারের লাশ ময়না তদন্তের পর গতকাল মঙ্গলবার পারিবারিক ভাবে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।নিহত শাবনূর আক্তারের বড় বোন জহুরা বেগম ও খালা শাহানাজ বেগম অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর আগে রবিনের কাছে শাবনুরকে বিয়ে দেই। বিয়ের পর থেকে শাবনুরের স্বামীসহ শ্বশুর,শ্বাশুরী,মামা শ্বশুর, খালা শ্বাশুরী ও ননদসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতো। আমরা যৌতুক হিসেবে যা দিয়েছি তা তাদের পছন্দমত না হওয়ায় তারা শাবনূরকে বালিশচাপা দিয়ে মেরে ফেলে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। রবিনের মামা তার মেয়েকে রবিনের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য শাবনূরের জীবনটাই শেষ করে দিলো আমরা আমাদের শাবনূরের হত্যাকারীদের ফাসি চাই।এ ব্যপারে শেখরনগর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো.নাসির উদ্দিন বলেন, সন্ধায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা যাচ্ছে পারিবারিক কলহের কারণে গৃহবধূ শাবনূরকে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার ভাই সম্রাট শেখ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মুল গেট বন্ধ থাকলেও বিল্ডিংয়ের এর পাশে একটি বাঁশের সিঁড়ি বা মই ছিলো। ঐ কক্ষের একটি জানালা খোলা ছিলো। জানালার বাইরে মই বা সিঁড়ি ও একটি বাঁশের লাঠি পরে ছিলো, যা দিয়ে ঐ ঘরের ছিটকিনি খোলা ও লাগানো সম্ভব। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।