শুক্রবার, ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |

মূলপাতা আইন অপরাধ

আমি ভাঙ্গা হাসপাতালের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে আছি,যে কোন সমস্যা আমাকে বলুন, আমিই দেখবো


প্রকাশের সময় :১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ৪:০৪ : পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব সংবাদদাতা : ঠান্ডা-জ্বর ও সর্দির চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা নিতে এক নারী নিতে আসেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালে ঢুকতেই ওই নারীকে কয়েকজন যুবক ও মধ্য বয়সী মহিলা তার পিছু নেয়। এসময় ওই নারী হাসপাতালে কেন এসছেন ? কার কাছে যাবেন ? এবং তার কি সমস্যা তা জানতে চায় তারা।

তখন তাদের প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে একপর্যায়ে ওই নারী জুরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তিনি চিকিৎসা নেন। পরে চিকিৎসাপত্র হাতে নিয়ে হাসপাতাল থেকে ওষুধ সংগ্রহ করার জুরুরী বিভাগ থেকে বের হন এসময় ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইডি কার্ড পরিহিত এক যুবক তার পথরোধ করেন এবং তিনি ওই নারীকে বলেন, ‘আমি সামিম শেখ’ আমি হাসাতালের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে আছি।

 

‘আপনার যে কোন সমস্যা আমাকে বলুন’, আমিই দেখবো। তখন ওই নারী সামিমকে জবাব দিয়ে বলেন, আমি ডাক্তার দেখিয়েছি, এখন হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে বাড়ি যাব। এতে সামিম ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীর সঙ্গে অসৌজন্য মুলক খারাপ আচরন করেন।

 

পরে ওই নারী লোক লজ্জার ভয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাহির থেকে ওষুধ কিনেন। ঘটনার এমন বিবরন দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ভাঙ্গা পৌর সভার এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী। নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তার স্বামী জানান, গতকাল ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তার স্ত্রী হাসপাতালের কিছু দালাল চক্রের কাছে লাঞ্চিত ও হয়রানির স্বিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি একটি সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, স্থানীয় কাপুড়িয়া সদরদী গ্রামের লুতফর শেখের ছেলে সামিম শেখ, সে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরি করার পরিচয় দিয়ে ও একটি ভুয়াঁ আইডি কার্ড প্রদর্শন করে দীর্ঘদিন যাবত মাদকের ব্যবসাসহ সরকারি ওষুধ পাচার করে আসছে। সামিমের নের্তৃত্বে প্রায় ১০/১২ জন হাসপাতাল এরিয়ায় বিভিন্ন বয়সী মহিলা ও যুবক রয়েছেন। যারা দুরদুরান্ত হতে ভাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায়-গরীব রোগীদেরকে টার্গেট করেন।

 

সাধারণ রোগীদের বিভিন্ন কলাকৌশলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে বাধ্য করা হয়। এতে সাধারণ রোগীদের অতিরিক্ত টাকা খরচসহ নানারকম হয়রানীর শিকার হতে হয়। তারা জানায়, প্রায়ই হসপাতালের মধ্যে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মোবাইল-টাকা চুরি হয়। এসব ঘটনার পেছনে ওই দলাল চক্রের যোগসাজোস রয়েছে।

 

তারা বলেন, হাসপাতালের কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসরকারী ক্লিনিক ও রোগনির্ণয়কেন্দ্রের (ডায়াগনষ্টিক সেন্টার) মালিক ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় এই দালাল চক্র গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

নাম গোঁপন রাখার শর্তে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সামিম শেখের দুর্ণীতি, দালালি ও চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে স্থানীয়রা সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ ও অনুলিপি দেন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ মহাপরিচালক, (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা), সিভিল সার্জন, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা নির্বাহী অফিসার বরাবর। কিন্তু রহস্যজনক কারনে সামিমের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শামিম ও ছাব্বিরসহ তার সহযোগিরা।

 

দালাল চক্রের কাছে লাঞ্চিত এক সাংবাদিক বলেন, শামিম শেখ সরকারি সায়িত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানের লোগো ও পরিচয়পত্র ব্যবহার করছে, যা আদৌ আইন সংগত নয়। তিনি বলেন, সামিমের গলায় একটি ভুঁয়া পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে দিয়ে, আড়ালে থেকে ভাঙ্গা হাসপাতালের অনৈতিক সুবিধা ভোগ করছেন একটি কুচক্রি মহল।

 

সম্প্রতি, সামিমের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভাঙ্গা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে। সেই সুত্রে জানাযায়, সামিম দীর্ঘদিন যাবত ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের সঙ্গে অসৎ আচরন ও দুর্ব্যবহার করেন।

 

সামিমের অনুসারীরা হাসপাতালের গেটের সামনে থাকে, কোন সাধারণ রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি না করিয়া প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

কোন রোগী যদি তার পরেও হাসপাতালে ভর্তি হতে চায়, তবে তাদের কাছ থেকে নগত অর্থ হাতিয়ে নেয়। যদি টাকা না দেয় তাহলে রোগীদের সাধে দুর্ব্যবহার করে। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে হাসপাতালে সার্টিফিকেট বানিজ্যসহ, দালালি, চাঁদাবাজি, দুর্ণীতি ও রমরমা সার্টিফিকেট বানিজ্যের জন্য ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সামিম।

 

তার এহেন কর্মকান্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও হাসপাতালকে চাঁদাবাজ দালালমুক্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষসহ অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে।

 

এ বিষয়ে সামিম শেখ দাবি করেন, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। এর জন্য আমাকে প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা বেতন দেন, যা আমি স্বাক্ষর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেই। তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তিনি অস্বিকার করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রাণেশ পন্ডিত জানান, শামিম শেখ হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নন।তবে, শামিম কিভাবে কার মাধ্যমে হাসপাতালে আসলো সে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে যে কোন অনিয়ম দূর্ণীতি ও দালালমুক্ত রাখতে তিনি যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন রুবেল জানান, বিষয়টির তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম জানান, এ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।


আরও খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১