নিজস্ব প্রতিবেদক: শিগগির আসছে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতি। এই পদোন্নতি কাঙ্ক্ষিত হলেও তা নিয়ে কর্মকর্তাদের তদবির ও দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের পদোন্নতি জট ও শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমাণ যোগ্য কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে সূত্র জানায়, বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের অন্তত চারটি ব্যাচের অতিরিক্ত ডিআইজি পদের কর্মকর্তারা ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেতে জোর তদবির শুরু করেছেন। এ অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে গঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) একাধিকবার বৈঠক ডেকেও তা হয়নি। সর্বশেষ গত রোববার এই পদোন্নতির বৈঠক হলেও তা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। শিগগির পদোন্নতি কমিটির এ বৈঠক হতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীতে ডিআইজি পদ রয়েছে ৮৭টি। এর মধ্যে মাত্র ১১টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকেই সুপার নিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ) ৬৫টি পদ অনুমোদন হয়ে আছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৭৬ কর্মকর্তাকে ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া যাবে। তবে অতিরিক্ত ডিআইজি থেকে ডিআইজি পদে পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন ১৩০ জনের বেশি। এজন্যই এই পদোন্নতি ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ডিআইজি পদে যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২০ ব্যাচে এখনো ৬০ কর্মকর্তা রয়েছেন। ২১ ব্যাচের ৩৭ কর্মকর্তা এবং ২২ ব্যাচের ৩০ কর্মকর্তাও রয়েছেন পদোন্নতির যোগ্য। এ ছাড়া গত বছর ২৪ ব্যাচের ১৪৪ কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজির সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি পান। তাদের এখনো পদায়ন করা হয়নি। যদিও যোগ্যতার ভিত্তিতে ২০২২ সালে ওই ব্যাচের ৬ কর্মকর্তাকে নিয়মিত পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি করা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী এ ৬ কর্মকর্তাও এখন ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য।
সূত্র বলছে, ২০ ব্যাচে আগে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, তাদের ব্যাচের সবাই পদোন্নতি পাবেন। এতে অন্যান্য ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় পড়ে দৌড়ঝাঁপ ও তদবির শুরু করেছেন। আবার ২০ ব্যাচের পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তারাও পদোন্নতি নিশ্চিত করতে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। পদোন্নতির আগে কোন কর্মকর্তার বাড়ি কোন অঞ্চলে, কোন কর্মকর্তার রাজনৈতিক পরিচয় কী এবং কে কার লোক—নিজেদের মধ্যে এমন আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক কর্মকর্তার আদর্শগত বিতর্ক থাকলেও তারাও নানাভাবে তদবির করে চাকরিজীবনের এই কাঙ্ক্ষিত পদটি চাইছেন। নিজেদের সরকারের আদর্শের বলেও নানা জায়গায় পরিচয় দিচ্ছেন তারা।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২০, ২১, ২২ ও ২৪ ব্যাচ ছাড়াও পুলিশ ক্যাডারের ১৫, ১৭ ও ১৮ ব্যাচের অন্তত ২৫ কর্মকর্তা এখনো অতিরিক্ত ডিআইজি পদে রয়েছেন। বছরের পর বছর পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে এই কর্মকর্তারাও এবার পদোন্নতির আলোচনায় রয়েছেন। এবার যদি ব্যাচভিত্তিতে তাদের ডিআইজি পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়, তাহলে শূন্য পদ দাঁড়াবে ৫১টি। এর বিপরীতে ২০ ব্যাচের সব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। অন্য তিন ব্যাচও পদোন্নতিবঞ্চিত হবে। এটি নিয়েও অস্বস্তিতে রয়েছেন বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তারা।
পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, সরকারি চাকরিতে সাধারণত তিনবার কোনো কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য বিবেচিত না হলে পরে আর তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয় না। এটা নিয়ম না হলেও অনেকটা রেওয়াজ হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে ১৫, ১৭ ও ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নাও নেওয়া হতে পারে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই তিনটি ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা এখন অতিরিক্ত আইজিপি পদে রয়েছেন, অনেকে ডিআইজি। তারা নানা কারণেই পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি পদেই রয়ে গেছেন। এখন তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও ডিআইজি পদের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও সুপারভিশন পদে কতটা দায়িত্ব পালন করতেন পারবেন, সে প্রশ্নও রয়েছে।