নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা কমিটির অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে করা রিট আবেদনের শুনানির শেষে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারওয়ার হোসেন ও মনোজ কুমার ভৌমিক। বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মো. সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।গত রোববার পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। এর দুই দিনের মাথায় গত ২ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে দ্বিতীয় দফার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
রিট আবেদনকারী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৭(গ) ধারা অনুসারে কমিশন স্ব-উদ্যোগে অনুসন্ধান শুরু করতে পারে। কিন্তু বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে পর পর দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পরও কমিশন অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে গত ৪ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করি। এতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৮ এপ্রিল বিবাদীদের আইনি নোটিশ দিই। নোটিশ প্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে স্বউদ্যোগে অনুসন্ধানের অনুরোধ করি। যথারীতি সাড়া না পেয়ে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করি।
দুদক চেয়ারম্যান, কমিশনার (তদন্ত), কমিশনার (অনুসন্ধান) ও দুদক সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে। অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি রিটে রুল চাওয়া হয়। দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বউদ্যোগে অনুসন্ধান সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৭(গ) ধারা বাস্তবায়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিটে।‘কমিশনের কার্যাবলী’ শিরোনামে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৭(গ) ধারায় বলা হয়েছে, দুর্নীতি সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ স্বউদ্যোগে বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি আবেদন করলে সে আবেদনের ভিত্তিতে কমিশন অনুসন্ধান করতে পারে।
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ অর্জনে নেপথ্যের অনিয়ম-দুর্নীতি, পদ-ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এ দুই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বউদ্যোগে অনুসন্ধানে নামতে রোববার (২১ এপ্রিল) কমিশনের চেয়ারম্যানের দপ্তরে আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।সুমনের আবেদনে বেনজির আহমেদের পাশাপাশি তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রিট আবেদন করে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলেন আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।