নিজস্ব প্রতিবেদক :চুয়াডাঙ্গায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে নিহত দুই বন্ধু সজল (২৭) ও মামুনুর রশিদের (২৫) জানাজা শেষে পাশাপাশি দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২৬ এপ্রিল) বাদ মাগরিব হাজারো মুসল্লিদের অংশগ্রহণে আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুটবল মাঠ প্রাঙ্গণে দুই বন্ধুর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে গ্রামের এতিমখানা মাদরাসা কবরস্থানে দুই বন্ধুকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার বিকেল ৩টার সময় ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ দুই বন্ধুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাদ মাগরিব ফুটবল মাঠে জানাজার নামাজ শেষে এতিমখানা মাদরাসার করবস্থানে দুই বন্ধুকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা গ্রামের আলমসাধু চালক সজল ও একই গ্রামের এনজিও কর্মী মামুনুর রশিদ।
এদিকে আজ বুধবার সকালে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে চুয়াডাঙ্গা সদরের আলুকদিয়া থেকে আটক করে পুলিশ। বিকেলে নিহত মামুনুর রশিদের ভাই স্বপন আলী বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর আটক দুজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়নের হুচুকপাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে মানিক হোসেন (১৮) ও একই এলাকার খবির উদ্দীনের ছেলে মিঠু রহমান (১৮)।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের ভালাইপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী ছামেনা খাতুন ভালাইপুর বাজারের মণ্ডল মার্কেটের আশরাফ বস্ত্রালয়ে কাপড় কিনতে আসেন। এসময় কাপড়ের দরদাম নিয়ে দোকানের কর্মচারী রিয়নের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রিয়ন ছামেনা খাতুনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং দোকান থেকে তাকে বের করে দেন। বিষয়টি বাড়িতে তার ছেলে টিপুকে জানালে রাত ৮টার দিকে সজল, মামুনুর রশিদ, পলাশ কয়েকজন বন্ধুরা মিলে আশরাফ বস্ত্রালয়ে কর্মচারী রিয়নের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। দোকানে না থাকায় রিয়নের বাড়িতে যান তারা। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর রিয়ন তার ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচন বোধ করে এবং তাদের মোটরসাইকেলযোগে টিপুর মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য রওনা দেন। ভালাইপুর বাজারস্থ জেনারেল স্টোরের সামনে পৌঁছালে এজাহার নামীয় আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের গতিরোধ করে। আসামিদের সঙ্গে সজল ও মামুনুর রশিদদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে সজলের পেটে ও মামুনের বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কিছুক্ষণ পর দুজনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত সজল পেশায় শ্যালোইঞ্জিন চালিত যান আলমসাধুর চালক ছিলেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সজল ছিল সবার ছোট। তার দুই বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।অপরদিকে মামুনুর রশিদ একটি বেসরকারি এমজিও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তিনি অবিবাহিত। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন। তারা যেখানেই যেত দুজনে এক সঙ্গে যেত বলে জানিয়েছেন দুই পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ থাকতে দেখা যায়। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।বুধবার বিকেল ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুজনের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেলে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। এক নজর দেখতে হাজারো মানুষ ভিড় করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার পাঁচ ও দশ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। সে কোনো অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।