সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |

মূলপাতা উপজেলার খবর

অফিস সহকারী শাহীনের শত কোটি টাকার বিত্ত বৈভব, নজিরবিহীন দু র্নী তির ঘটনা হার মানাবে আরব্য রজনীর রুপকথার গল্পকে!


প্রকাশের সময় :১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ৪:২১ : অপরাহ্ণ

আবুল হাসনাত মিনহাজ  , স্টাফ  রিপোর্টার : কেউ তাকে ডাকেন রেজিস্ট্রি অফিসের কালো বিড়াল, কেউ ডাকেন রেজিস্ট্রি অফিসের বিষ ফোঁড়া। হবিগঞ্জের রেজিস্ট্রেশন বিভাগের মহা-ক্ষমতাধর এই কেরানীর নাম লুতফুর রহমান শাহীন। সদর উপজেলায় অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত এই কেরানীর হতদরিদ্র অবস্থা থেকে শতকোটি টাকার বিত্ত-বৈভব অর্জনের বাস্তবতা হার মানাবে আরব্য রজনীর যে কোন রুপকথার গল্পকে। ২০১৩ সালে অবৈধ নিয়োগে পাওয়া চাকুরী যেন তার কাছে আলাদীনের চেরাগে পরিণত হয়েছে। পদে তিনি ১৬ তম গ্রেডে চাকুরী করা ৩য় শ্রেনীর সরকারি কর্মচারী । কিন্তু বাস্তবে সবাই জানে হবিগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের সকল দন্ডমুন্ডের কর্তা তিনি।

নিজের ইচ্ছামতো জেলার সবচেয়ে ভালো অফিসে বদলি নেন। সেই সাথে জেলার সকল কর্মচারীদের পদায়ন, নিয়োগ, বদলী, অফিসারদের খন্ডকালীন দায়িত্ব সবই নির্ধারণ করে দেন তিনি। বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেন। তার গ্রিন সিগনাল ছাড়া জেলার কোন কাজ হলে অফিসের কার্যক্রম অচল করে দেয়ার হুমকি দেন। অভিযোগ রয়েছে জেলার সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী, দলিল লেখক ও সাধারণ জনগন জিম্মি হয়ে রয়েছেন এ কেরানীর কাছে।

তৃতীয় শ্রেনীর এই সরকারী কর্মচারীর বর্তমান বেতন সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকার মতো। সে হিসেবে বিগত এগারো বছরে তার মোট আয় প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং বৃদ্ধ পিতা মাতা সহ তার পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করে চলতে বর্তমান বাজারে যেখানে হিমশিম খাওয়ার কথা সেখানে লুতফুর কেবল বিলাস বহুল জীবন যাপনই করেন না, মাত্র এক দশকের চাকুরিতে গড়েছেন শত কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ।

সরেজমিনে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌরসভার উত্তর বাজার এলাকায় অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, সীমানা দেয়া বিশাল ভুসম্পত্তির মালিক লুতফর রহমান শাহীন। যেন এলাকার ছোটখাট একজন জমিদার। এখানে প্রায় একবিঘা জমির উপর আব্দুল মান্নান ভবন নামে আলিশান পাঁচতলা বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন লুতফুর। অতচ ২০১৩ সালে চাকুরী পাওয়ার আগে তাদের ছিল ভাঙ্গা ছনের ঘর। তার পিতা হতদরিদ্র কৃষক আব্দুল মান্নান সংসারের হাল ধরতে মাঝে মাঝে দিন মজুরি ও মাটি কাটার কাজ করতেন। তবে ছেলে লুতফুর রহমান শাহীন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চাকুরি পাওয়ার পর আলাদীনের চেরাগের মতোই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে সে বাড়ি করতেই শাহীন খরচ করেছেন ১০ কোটি টাকা। তবে শাহীন বলছেন ব্যাংক লোনের মাধ্যমে বাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি।

শুধু বাড়ি নয় চুনারুঘাট সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে আমাদের হাতে এ ধরনের অন্তত ১৫ টি দলিলের তথ্য এসেছে যার মাধ্যমে তিনি তার নামে চুনারুঘাট পৌরসভার বড়াইল ও পার্শবর্তী হবিবপুর, উবাহাটা মৌজায় ২৫৯.৯২ শতক জমি নিজ নামে হস্তান্তর করেছেন। সরকারি মৌজা রেট অনুযায়ী এ জমির দাম এক কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা হলেও প্রকৃত বাজার মূল্য অন্তত ৫০ কোটি টাকা। হাতে থাকা দলিলগুলোর একটি যাচাই করে দেখা যায়, কৌশলী এ দুনীতিবাজ তার বোন গৃহিনী কুলসুমা খাতুনের নামে ৬১ শতক জমি কেনেন ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে । এ ৬১ শতক জমির মধ্যে রয়েছে পৌরসভার বরাইল মৌজার বাজারের একটি মার্কেটের ২ শতক জমি এবং উবাহাটা মৌজায় ৮ শতক জমির দোকান ভিটি। এ দুটি জমির একটি চুনারুঘাট মূল বাজারে অন্যটি হবিগঞ্জের অন্যতম বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র শায়েস্তগঞ্জ বাজারে। কেবল এই দুই খন্ড জমির মূল্যই রয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বলে জানান এলকার লোকজন।

অন্যদিকে পৌরসভার সংলগ্ন হবিবপুর মৌজার ৫৬ শতক জমি। এই জমির দাম ১০ কোটি টাকার মতো। তবে ২০২৩ সালে তার বোনের কাছ থেকে যে ৪৯১৬নং হেবা দলিল মূলে তিনি সম্পদটি তার নামে করে নিয়েছেন তাতে মূল্যের কলামে রয়েছে মূল্য প্রযোজ্য নয়। এভাবেই বোনকে ব্যবহার করে দুর্নীতি লব্ধ অর্থ সাদা করার কৌশল নিয়েছে এ স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ। দলিলে সম্পত্তির মূল্য উল্লেখ বাধ্যতামূলক হলেও অভিযোগ রয়েছে দলিল নিবন্ধনের পর দুনীতির প্রমাণ ঢাকতে ঘষামাজার মাধ্যমে মূল্য প্রযোজ্য নয় কথাটি বসানো হয়েছে।

চুনারুঘাট রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সূত্র আমাদের জানিয়েছে আমাদের হাতে থাকা দলিলগুলো কেবলই পাহাড়ের চুড়ার মতো লুতফুর রহমান শাহীনের মোট সম্পদের ছোট্ট একটি অংশ। তার পরিবারের সদস্য সহ শ^শুর বাড়ির লোকজনের নামে কেবল চুনারুঘাট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে শতাধিক জমির দলিল পাওয়া যাবে যা লুতফুর রহমান শাহীনের অবৈধ দুর্নীতির টাকায় কেনা। এছাড়া পার্শবর্তী মাধবপুর উপজেলার শিল্পাঞ্চল, বাহুবল উপজেলা ও সদর উপজেলায়ও নামে বেনামে একরের পর একর সম্পত্তি কিনেছেন তিনি।এতসব দুনীতির অভিযোগ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের ব্যাপারে জানতে চাইলে লুতফর রহমান শাহীন জানান তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা।

এদিকে শাহীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অসংখ্য অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন সহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়লেও এখনও বহাল তবিয়তে আছেন এ আত্মস্বীকৃত দুনীতিবাজ। কথিত আছে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সব অফিসকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রাখেন শাহীন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক হবিগঞ্জ কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো: এরশাদ মিয়া জানান, একজন অফিস সহকারীর এত সম্পদ মোটেই স্বাভাবিক নয় এবং দুদককে ম্যানেজ করার সুযোগ নেই। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ২য় পর্বে থাকছে দুর্নীতিবাজ শাহীনের অবৈধ নিয়োগের আদ্যপান্ত।


আরও খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১