মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে হতাহতের ঘটনায় নিখোঁজ দুই ব্যক্তির মরদহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।
আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর ) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই দুই মরদেহের মধ্যে একটি ঘটনাস্থলের পাশেই অপরটি টঙ্গীবাড়ি উপজেলার চৌসার গ্রামের পদ্মা নদী এলাকায় ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। পরে তারা লাশ দুটি উদ্ধার করে হাসাইল বাজার এলাকায় নিয়ে আসে। এ সময় নিহতের স্বজনরা তাদের লাশ দেখে সনাক্ত করে। উদ্ধার হওয়া দুই মরদেহ হলো মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) ও রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকার মাহফুজুর রহমান (৩৫) এর। এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় মোট ৪ মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
মুন্সীগঞ্জ সদরের চর আবদুল্লা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মো. হাসনাত জামান মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে বলেন, নিখোঁজ দুই ব্যক্তির মরদেহ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের আত্মীয় স্বজনরা মরদেহ দুটি তাদের বলে শনাক্ত করেছে। মরদেহ দুটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরো বলেন এ ঘটনায় ইতিমধ্যে টঙ্গীবাড়ী থানায় ৫ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে।ঘাতক বাল্কহেডের ৩ শ্রমিককে আটক করে টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আটক ৩ শ্রমিক জনরোষ থেকে বাঁচতে জব্দকৃত বাল্কহেডের ইঞ্জিন কক্ষে তেল রাখার ড্রামে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় নৌ পুলিশ বাল্কহেড তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের আটক করে। তবে ঘটনার পর বাল্কহেডের চালক পালিয়ে গেছে। বাল্কহেডটি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার দশআনি এলাকার মো. নরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বলে জানাগেছে।
উল্লেখ শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের হাসাইলের চর থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হাসাইল ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। তখন দক্ষিণ দশআনি নামের বাল্কহেডটি চাঁদপুর থেকে বালু আনতে পদ্মার শাখানদী দিয়ে মূল নদীর দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে অসাবধানতাবশত বাল্কহেডটি ট্রলারের ওপর উঠে যায়। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকার মো. ফারুকের মেয়ে ফাইজা আক্তার (৬) ও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মান্দ্রা এলাকার নজরুল ব্যাপারীর মেয়ে শিফার (১৫) লাশ ঘটনার পরপরই উদ্ধার করে স্থানীয়রা। আজ নিখোঁজ অপর দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হলো। এর আগে
রবিবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী নৌযান দুর্ঘটনাস্থলে আসে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি নদী থেকে টেনে তোলা হয়।
এদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনায় টঙ্গিবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক উপজেলার হাসাইল গ্রামের আজিজ বেপারীর ছেলে মো. আলামিন বেপারী বাদি হয়ে এ ঘটনায় বাল্কহেডের মালিক ও চালকসহ ৫ জনকে আসামী করে টঙ্গিবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বাল্কহেডের ৩ শ্রমিকে আটক করে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন, বাল্কহেডের ইঞ্জিন মিস্ত্রি মতলব উত্তর থানার দশআনি এলাকার মৃত আবুল হাসেম মিয়াজির ছেলে হানিফ মিয়াজি (৫৫), বাল্কহেডের বাবুর্চি একই উপজেলার সাঙ্গীভাঙ্গা এলাকার নবির হোসেন সরকারের ছেলে রাকিব হাসান (২০), বাল্কহেডের লস্কর শেখ সাদি বেপারীর ছেলে আবু হানিফ (২১)। এদিকে মামলার অপর ২ আসামী বাল্কহেডের মালিক চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার দক্ষিন দশানী গ্রামের তাইজুদ্দিন মিয়াজীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৩৮) ও সুকানী রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মহাজন পাড়া এলাকার শাহজালালের ছেলে বেল্লাল হোসেন (৩৫) এখনো পলাতক রয়েছে।