হালদা নদী, এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চল খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার এ নদী; প্রকৃতির বিস্ময়কর সৃষ্টি।
বাংলাদেশে ছোট বড় প্রায় ৮০০ নদীর মধ্যে দেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার ছোট্ট একটি নদী হালদা।
নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। হালদা পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ১৬।
নামে-গুণে অনন্য ‘হালদা’ স্মরণাতীতকাল থেকে রুই, কাতলা, মৃগেলও কালিবাউশ ডিম ছেড়ে আসছে।
তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, নদী থেকে পোনা আহরণের নজির থাকলেও হালদা ছাড়া বিশ্বের আর কোনো নদীতে ডিম আহরণের নজির নেই।
প্রকৃতির বিস্ময়কর সৃষ্টি ‘হালদা নদী’- বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী এবং এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়।
হালদা’র উৎপত্তি স্থল খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম সালদা।
সালদার পাহাড়ি র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে নামকরণ হয় হালদা।
‘হালদা নদী’ বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বাটনাতলী পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে মানিকছড়ি, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িশ্চরের নিকট কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়েছে।
হালদার প্রধান উপনদী ধুরুং খুবই খরস্রোতা। এটি পার্বত্য এলাকার পাকশমিমুরা রেঞ্জ থেকে বের হয়ে পূর্বদিকে হালদা নদীর প্রায় সমান্তরালে সমগ্র ফটিকছড়ি উপজেলা ঘুরে পূর্ব ধলাই নামক স্থানে হালদা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
গত এক শতাব্দীর মধ্যে নদীটি বেশ কয়েকবার গতিপথ পরিবর্তন করেছে।
হালদা নদী ‘তে মাছের ডিম ছাড়ার রহস্য!
রহস্যময় এ পৃথিবীতে হালদা নদীও অপার এক রহস্যে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে প্রতিবছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে কার্পজাতীয় মাছ ডিম দিয়ে থাকে।
কিন্তু কেন বা কি কারণে কার্পজাতীয় মাছ হালদায় ডিম দেয় তা আমাদের অনেকেরই অজানা।
আসুন হালদার কিছু রহস্যময় তথ্য জেনে আসি-
হালদা নদীর কিছু ভৌত ও জৈব-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যই এই নদীকে করে তুলছে মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী। ভৌত কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে এই নদীর অনেকগুলো বাঁক যেগুলোকে “অক্সবো” (Ox-bow) বাঁক বলে।
এই বাঁকগুলোতে স্রোতের ফলে প্রচণ্ড ঘূর্ণন সৃষ্টি হয় যা গভীর স্থানের সৃষ্টি করে।
স্থানীয় ভাষায় গভীর স্থানগুলোকে “কুম” বা “কুয়া” বলা হয়। উজান হতে আসা বিভিন্ন পুষ্টি ও অন্যান্য পদার্থ কুমের মধ্যে এসে জমা হয় ফলে পানি ফেনিল ও ঘোলাটে হয়ে যায়। মা মাছেরা কুমের মধ্যে আশ্রয় নেয়।