নিজস্ব প্রতিবেদক ,খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ি: উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা পেরিয়ে শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে।
এখন আলোচনায় কারা ঠাঁই পাচ্ছেন মন্ত্রী পরিষদে। একই আলোচনায় সরগরম পাহাড়বাসীও। কে হচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী। বীর বাহাদুর, দীপংকর তালুকদার নাকি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরাতনে আস্থা রাখবেন নাকি নতুন মুখ আনবেন? তবে স্থানীয়দের প্রত্যাশা নতুন মুখ আসুক পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে।
সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে বান্দরবান আসন থেকে সপ্তমবারের মতো বীর বাহাদুর উশৈসিং, রাঙামাটি আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো দীপংকর তালুকদার এবং খাগড়াছড়ি আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
মন্ত্রীত্ব ধরে রাখতে মরিয়া বীর বাহাদুরের সঙ্গে পাহাড়ে অভিজ্ঞতায় দীপংকর তালুকদার এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতিসহ নানামুখী চাপ সামলে চলা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও দীর্ঘদিন ধরে যে যার মতো করে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
পার্বত্য চুক্তির আলোকে ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রনালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য প্রয়াত কল্প রঞ্জন চাকমা। পরবর্তীতে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির সরকারের আমলে রাঙামাটির সংসদ সদস্য মনি স্বপন দেওয়ান উপ মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে টানা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিং। শুরুতে প্রতিমন্ত্রী হলেও পরবর্তীতে ২০১৮ সালে পূর্ণ মন্ত্রী হয়ে টানা নয় বছর ধরে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছে।
পার্বত্য তিন জেলা নিয়ে একজন পূর্ণ মন্ত্রী থাকলেও বিগত সময়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বাসিন্দারা বীর বাহাদুর উশৈসিং’র দেখা পেয়েছেন হাতেগোনা। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা তিন জেলায় উন্নয়ন বৈষম্যের অভিযোগও করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে একই মন্ত্রী থাকাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এক জেলা কেন্দ্রীক হয়ে গেছে। অপরাপর দুই জেলাকেও বিবেচনা করা উচিৎ। তাছাড়া তিন জেলার মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে খাগড়াছড়ির গুরুত্ব বেশি। সশস্ত্র সংঘাত থেকে অস্ত্র সমর্পণ, শরণার্থী টাস্কফোর্স, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু, ভূমি কমিশন সংক্রান্ত কার্যক্রমসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি খাগড়াছড়িতে। তাই নীতি-নির্ধারক মহল বিষয়টি ভাববেন বলে আমার বিশ্বাস।
দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্পাদক ফজলে এলাহী বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি মন্ত্রিত্ববঞ্চিত। পরপর দুইবার বান্দরবানের সংসদ সদস্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার পাহাড়ের উন্নয়ন বৈষম্য দূর করতে হলে রাঙামাটি কিংবা খাগড়াছড়ি থেকে একজনকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া উচিৎ। সেদিক থেকে নানান ঘটনা প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ খাগড়াছড়ি। দুই যুগ ধরে বঞ্চিত খাগড়াছড়ি আসন থেকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া যেতে পারে। আর না হয় রাঙামাটি।
এখন দেখার বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরাতনে আস্থা রাখছেন নাকি নতুন মুখ’কে ঠাঁই দেবেন মন্ত্রণালয়ে।