নিজস্ব প্রতিবেদক: বাঙালি সনাতন ধর্মাবলাম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটছে আজ। রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে বিদায় নেবেন মা দুর্গা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।গত বুধবার (৯ অক্টেবার) ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবছর দেবী দুর্গার আগমন করেছে দোলায়। ওই পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে, দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। টানা পাঁচ দিনের আনন্দ উৎসবের পর রোববার বিজয়া দশমীর দিন দেবী বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
শনিবার মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতি শেষে দেবীর বন্দনায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিষাদের সুর বাজতে শুরু করে। দুর্গতি নাশিনী মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধণা শেষ হলে কৈলাশে স্বামীগৃহে ফিরবেন মা দুর্গা। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শোভাযাত্রা বের হবে, যা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সদরঘাট গিয়ে শেষ হবে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বছরান্তে দেবী দুর্গার আগমনে পাঁচ দিন দেশের প্রতিটি মন্দিরে বিরাজ করছিল আনন্দ আর উদ্দীপনাময় এক পরিবেশ। মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠা ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা আর শঙ্খ ধ্বনিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে আবহমান বাংলা। উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে নৈসর্গিক নির্জনতা। মন্দিরে মন্দিরে মন্ত্র উচ্চারণ আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে শুভ কামনা করা হয়।মহানবমীতে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরে মন্দিরে দেবী দর্শনে আসেন। বিশেষ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মণ্ডপগুলোতে সকাল থেকে মানুষের আনাগোনা দেখা যায়, যা বিকেলের দিকে ভিড়ে পরিণত হয়। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তারা নতুন পোশাকে পরিবারের সঙ্গে এসেছে। বাসায় ফেরার সময় মণ্ডপগুলোর বাইরে অস্থায়ীভাবে বসা দোকানপাট থেকে বাহারি সব খাবারসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছে।শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়। মণ্ডপ প্রাঙ্গণে তৈরি করা হয় বর্ণিল তোরণ। বিভিন্ন পূজামণ্ডপে এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। বিজয়া দশমীতে থাকে সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।