নিউজ ডেস্কঃদেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে গঠিত এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৬ মার্চ। এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সাজিয়েছে র্যাব। মূল অনুষ্ঠান হবে রোববার (১৯ মার্চ)। রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ও র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এ বাহিনী ২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর দিনটিকে ‘রেইজিং ডে’ হিসেবে পালন করে বিশেষ এ বাহিনী।
বর্তমানে বাহিনীর মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন।
প্রতিষ্ঠার পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও স্ব স্ব এলাকায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে র্যাব। প্রায় তিন সপ্তাহ পর ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) রমনা বটমূলে নিরাপত্তা দিয়ে র্যাব তাদের কার্যক্রম শুরু করে। একই বছরের ২১ জুন পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে বাহিনীটি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। বর্তমানে সারাদেশে র্যাবের ব্যাটালিয়ন সংখ্যা ১৫টি। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জীবনবাজি রেখে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে সংস্থাটি।
র্যাব দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ টানা ৩৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর আমির শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেটের শাপলাবাগ থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। প্রতিষ্ঠার পর এটিই ছিল র্যাবের সবচেয়ে আলোচিত অভিযান ও সবচেয়ে বড় সাফল্য।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের শক্তি জানান দেওয়ার পরপরই মাঠে নামেন র্যাব গোয়েন্দারা। এরপর গ্রেফতার করা হয় সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানিসহ শত শত জঙ্গিকে।
এছাড়া রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর র্যাব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর তিন শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে র্যাব মোট অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করে ২৮ হাজার ৩৮৩ জনকে। একবছরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১২৪টি অভিযানে ১৮৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে।
এছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গ্রেফতার ৬৮ সদস্য ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ১৭ জন গ্রেফতার হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬ জন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্যাবের কাছে জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে মোট ৪২১ জন অপরাধী আত্মসমর্পণ করে। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। র্যাব নিজস্ব অর্থায়নে তাদের পুনর্বাসনে ভূমিকা রেখেছে।
সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী তথ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধ, নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য, খুন, অপহরণ, মাদক, ডাকাতির বিষয়ে যে কেউ সহজে জানাতে পারে।
এলিট ফোর্স র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলছে অকুতোভয় র্যাব ফোর্সেস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশপ্রেমে বলিয়ান হয়ে পেশাদারত্ব, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, যাতে সাধারণ জনগণ মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
র্যাবের এ দীর্ঘ পথচলায় পাশে থাকার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল জানিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের চলার পথকে অনেক সহজ করেছেন। র্যাবের সুনাম এবং সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে আপনাদের পাশে থাকার গল্প। দেড় যুগ শেষে দীপ্ত পদক্ষেপে সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞায় সবার দোয়া এবং শুভকামনা একান্ত কাম্য।
র্যাবের মহাপরিচালকের (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, আমি র্যাব মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর দেখছি, মানুষ যে কোনো সমস্যায় র্যাবের কাছে আসে। আমি প্রতিদিন ২০-২৫ জনের সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলি। র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। আমরা আইনের মধ্যে থেকে মানুষের পাশে থাকি, আমরা বেআইনি কোনো কাজ করি না। এজন্যই মনে করি র্যাব ভালো কাজ করছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ে ট্রেনিং নেওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক জঙ্গি সদস্যকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এই জঙ্গিরা পাহাড়ে গিয়ে কেএনএফ’র সহায়তায় সেখানে প্রশিক্ষণ নিত। আমরা সবাইকে ধরতে কাজ করছি। তারা যে এলাকায় ক্যাম্প করেছে, সেটি মিয়ানমার ও মিজোরাম সীমান্ত ঘেঁষা। যে কোনো অপরাধ করে তারা সহজেই সীমান্তে প্রবেশ করছে। সেখানকার ভৌগলিক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ক্যাম্প সেখানে নেই। আমরা তাদের অনেককে গ্রেফতার করেছি, তারাও চেষ্টা করবে আমাদের আক্রমণ করার। আমরা সেখানে নিরাপত্তা ও অভিযান জোরদার করবো। এটি নিয়ে দেশবাসীর হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা নতুন করে অন্য প্ল্যানে অভিযান শুরু করব।
সরকারি মেশিনারিজের সামনে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ টিকে থাকতে পারে এটা আমি বিশ্বাস করি না। ওদের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যা যা করার, আমরা করবো বলে মন্তব্য করেন র্যাব মহাপরিচালক।
সুএ পি কাগজ