পটুয়াখালী প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় রিমালে দুর্গতদের ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনাদের পাশে আছি; যা যা প্রয়োজন সব করে দেব। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ মাঠে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কাজের জন্য আওয়ামী লীগ সব সময় নিবেদিতপ্রাণ। আমরা আপনাদের পাশে আছি, আপনাদের পাশে থাকব এবং সব ধরনের সহযোগিতা, যা যা প্রয়োজন সেটা আমি করে দেবো।
ইতোমধ্যে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে যে সমস্ত রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাঁধ যেগুলো ভেঙে গেছে, বাঁধ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি, যাতে বর্ষার আগেই আমরা এই বাঁধগুলো নির্মাণ করে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারি—সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে, আমরা খোঁজ নিতে বলেছি। যেখানে যেখানে যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙেছে, তারা যেন ঘর-বাড়ি আবার মেরামত করতে পারেন, আবার নির্মাণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও আমি করে দেবো। অন্তত এইটুকু ভরসা আপনারা রাখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক পুকুরের পানি নোনতা হয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় মাছের ঘের ভেসে গেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে, ধান কাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও তরিতরকারি, ফসল যেগুলো নষ্ট হয়েছে, কৃষক যাতে আবার সেগুলো বপণ করতে পারে তার জন্য বীজ, সার যা যা লাগে সব ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমি করে দেবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রকৃতির নিয়মেই আসে। সেখানে মানুষের জীবন-মান বাঁচানোটাই সবথেকে বড়কথা। জিনিস গেলে পাওয়া যায় কিন্তু জীবন তো আর পাওয়া যায় না।
টানা চারবারের সরকারপ্রধান বলেন, আজকে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। দেশের উন্নতির বিষয়ে আজকে বলার কিছু নেই; আপনারা নিজেরাই জানেন। আমরা রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ করে দিয়ে আপনাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা—সব করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এবার খুবই অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। আমরা সাইক্লোন শেল্টার করেছি, সেখানে মানুষ নিরাপদে আশ্রয় পেয়েছে, দুর্যোগ সহনীয় ঘর ভূমিহীন-গৃহহীনদের মধ্যে বিতরণ করেছি। যে কারণে অন্তত মানুষ আশ্রয়ের জায়গা পেয়েছে। পশু-পাখির আশ্রয়ের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। আমরা চাই, এই দুর্যোগ থেকে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ যেন মুক্তি পায়। আমরা জানি, এই অঞ্চলটা সব সময় দুর্যোগপ্রবণ। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষের জীবনে যা চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা তার ব্যবস্থা করার জন্য যা যা করার দরকার আওয়ামী লীগ সরকার করে যাচ্ছে।
বর্তমানে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে বলেই সম্ভব হয়েছে। এর আগে তো অনেকেই ছিল। কেউ তো এদিকে দৃষ্টি দেয়নি! এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে কিন্তু সেটাকে মোকাবিলা করে মানুষের জানমাল রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি।
কলাপাড়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল নন্দীর সভাপতিত্বে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ।এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত পটুয়াখালীর কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বেলা ১১টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হয়ে দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া আসেন তিনি। উপজেলার খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণের আগে ভূমির কাছাকাছি থেকে দুর্যোগকবলিত এলাকা মঠবাড়ীয়া ও পাথরঘাটা প্রত্যক্ষ করেন সরকারপ্রধান। ত্রাণ বিতরণের পর প্রধানমন্ত্রী শহীদ শেখ কামাল ব্রিজ পরিদর্শন করেন এবং পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।এখানে তিনি ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা দেন।